সংবাদচর্চা রিপোর্ট :
নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের অন্তর্ভূক্ত নয়টি কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে ক্রমেই তিক্ততা বাড়ছে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে উদ্দেশ্য করে তীর্যক ভাষা বক্তব্য দিচ্ছেন। এতে করে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ক্ষমতাসীন দলটির বিবাদমান দুটি গ্রুপের নেতাকর্মীদের অবস্থান।
সম্প্রতি মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের উপস্থিতিতে আনোয়ার হোসেন ও খোকন সাহাকে বন্দরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিলেন একটি পক্ষ। এবার সেই ধারাবাহিকতায় আনোয়ার হোসেন ও খোকন সাহার উপস্থিতিতে আরাফাতকে পাল্টা গণধোলাই দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বিকেলে বন্দরের নবীগঞ্জ সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগের ৭৫তম তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে ওই ঘোষণা দেন কথিত যুবলীগ নেতা খান মাসুদ। যিনি সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলার আসামি।
খান মাসুদ তার বক্তব্যে জিএম আরাফাতকে উদ্দেশ্য করে এবং বড় ভাই সম্বোধন করে বলেন, ‘আপনারা সাবধান হয়ে যান। বন্দরে এসে মহানগর আওয়ামী লীগের অভিভাবক আনোয়ার হোসেন ও খোকন সাহা দাদাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন। এরপর এমন সাহস দেখালে আমরা আর নেতাদের কথা শুনবো না। আপনাদের ধরে গণধোলাই দিবো। বন্দরের ৯টা ওয়ার্ডের কোথাও মিটিং করতে পারবেন না। যারা আপনাদের সাথে যাবে তাদের বাড়িঘর ঘেরাও করা হবে।’
অন্যদিকে একই সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম আহসান হাবিব জিএম আরাফাতকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি আনোয়ার হোসেনের হাত ধরে মহানগরে পদ পাইছেন। আপনার বয়সই বা কত? কতদিন ধরে রাজনীতিতে আসছেন। আপনি সিনিয়র নেতাদের নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলে আলোচনায় আসতে চান। আমি আপনার নাম নিলে আপনি হাইলাইটস হবেন। আমি আপনাকে নিয়ে বলবো না। আপনার জন্য খোকন সাহা ও আনোয়ার হোসেনের নাম্বার ছাড়া নেতারাই যথেষ্ট। আপনি কোন সাহসে আনোয়ার হোসেনকে নিয়ে মন্তব্য করেন। তিনি নাকি ভুল করেছেন অযোগ্যদের নেতা বানিয়েছেন। আনোয়ার হোসেনের সুপারিশে আপনি মহানগরের নেতা হয়েছেন তাহলে ওইটাও ভূল ছিল।’
২৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন জনি জিএম আরাফাতকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমাদের এখন লজ্জাবোধ হচ্ছে। আমরা একসময় আপনার নেতৃত্বে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি। আমাদের নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে যেখানে আপনার উচিত আমাদের উৎসাহিত করা সেখানে আপনি আমাদের বিরোধীতা করছেন। আমরা শামীম ওসমানের কর্মী, আমরা যদি চাই দাগ দিয়ে দিবো সেই দাগের বাইরে যাওয়ার সামর্থ্য আপনাদের নাই। যদি আপনারা মূল স্রোতে রাজনীতি করতে আসেন, আমাদের সহযোগিতা পাবেন। আর মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিয়ে বেয়াদবি করলে প্রতিহত করা হবে।’
২৭নং আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মামুন বলেন, ‘আপনি ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন আমিও ছিলাম। আমরা বন্দরে ভাইসা আসি নাই। রাজাকার সন্তানদের প্রশয়ে থাকা জনগনের টিসিবির পন্য চুরি করে খাওয়া নেতাদের নিয়ে লাফান, সাবধান করে দিলাম।’
এদিকে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত বলেন, ‘আমি এ পর্যন্ত যেসব বক্তব্য দিয়েছে তা যথাযথ এবং যৌক্তিক। ডকুমেন্টারির বাইরে কোনো কথা এখনও পর্যন্ত বিলিনি। ফলে আমার সেসব বক্তব্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও আমলে নিয়েছেন। এতে করে তারা আতঙ্কিত হয়ে উল্টাপাল্টা বক্তব্য দিচ্ছেন। এসব বক্তব্য আক্রমনাত্মক, রাজনৈতিক নয়। এসব বক্তব্য আমি আমলে নিচ্ছি না।’